বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বসন্তহীন বসন্তে

পরামর্শদাতা : ডা. অলকেশ কুমার কোলে (অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার, বেলেঘাটা আই ডি হাসপিটাল)


শীত প্রায় বিদায় নিয়েছে। বাতাসে বসন্তের মিঠে হাওয়া। অথচ এই ঋতু পরিবর্তনের সময়টা একটু বুঝেশুনে না থাকতে পারলে কিন্তু মুশকিল। যেমন সারা বছর হলেও বসন্তে জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। হঠাৎ করে হয়তো দেখলেন পিঠ বা কানের পেছনে অথবা শরীরের অন্য কোথাও জলগোটার মতো একটা বা কয়েকটা ফোস্কা বেরোল। সে রকম হলেই সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে সঙ্গে যদি জ্বর আর গা ম্যাজম্যাজ মতো হয়। তবে সেটা জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হতে পারে। জলবসন্ত হয়েছে সন্দেহ হলেই কাল বিলম্ব না করে ডাক্তার দেখাবেন। জলবসন্ত নিয়ে অনেক ভুল ধারণা অনেকের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। যেমন কেউ কেউ মনে করেন এর কোনও চিকিৎসা নেই। ওষুধ ছাড়াই আস্তে আস্তে নিজের থেকে ঠিক হয়ে যাবে। জলবসন্ত নিজের থেকে ভাল হয়ে যায়, সেটা যেমন ঠিক, তেমনই অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতেও পারে। যার থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে হার্ট বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যা থাকলে বা যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও জলবসন্ত থেকে অনেক রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কে ইনফেকশন বা প্যানক্রিয়াটিসের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই জলবসন্ত হলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিৎ। বিশেষ করে যদি দেখেন রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, পেটে ব্যথা হচ্ছে, বমি বমি ভাব অথবা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এ রকম হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ট্রিটমেন্ট করতে হতে পারে। বয়স্কদের জলবসন্ত হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। বাড়িতে প্রেগন্যান্ট মহিলা থাকলে তাঁকে আলাদা করে রাখতে হবে। কারণ তাঁর জলবসন্ত হলে গর্ভস্থ শিশুরও সেটা হতে পারে।

কী করবেন
জ্বর আর গা হাত-পা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন। গুটি বেরোনোর তিন দিনের মধ্যে বহু চিকিৎসক অ্যাসিক্লোভির নামের একটি ওষুধ খেতে বলেন। এতে র‍্যাশ কম হয়, রোগী তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন। তবে নিজেরা দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নেবেন না। কারণ কিডনির সমস্যার মতো কিছু অসুখে ওষুধের মাত্রা কম করে দেওয়া হয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিৎ নয়। ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি জল বেশি করে খাবেন। স্নান করতে পারেন। কিন্তু গা ঘষবেন না। ফোস্কা ফেটে ইনফেকশন তৈরি হতে পারে। খুব বেশি ফোস্কা থাকলে স্নান না করাই ভাল। তখন গরম জলে তোয়ালে ডুবিয়ে গা স্পঞ্জ করতে পারেন। ফোস্কা মিশে যাওয়ার পর সারা গায়ে তেল নারকেল বা সরষের তেল লাগাবেন। নারকেল তেল লাগালেই চুলকানি কম হবে। বাচ্চাদের নখ কেটে রাখতে হবে। নইলে ফোস্কা চুলকে দিতে পারে। চুলকানি না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো দুই-এক দিন ওষুধ খাওয়া যাতে পারে।

কী করবেন না
অনেকেই ঘরে নিমপাতা রাখেন। নিমের আঁটি দিয়ে গা চুলকোন। এ সবের কোনও দরকার নেই। ফোস্কা শুকোবার পর অনেকে চুমটি আলাদা করে সংগ্রহ করে পড়ে তা পুড়িয়ে ফেলেন। এ সবের কোনও দরকার নেই। কারণ ওতে আর জীবাণু থাকে না। তেল-মশলা-ঘি ছাড়া খাবার রোগীকে খাওয়ানোর দরকার নেই। সবাই যা খায়, তাই রোগী খাবেন। কারণ এই সময় রোগীর অনেক বেশি ক্যালোরির দরকার। বাজারে এখন নিমপাতা প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। নিমপাতার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু জলবসন্তের ক্ষেত্রে আগে থেকে নিমপাতা খেয়ে কোনও লাভ হয় না।

সৌজন্যেঃ আমার আনন্দবাজার পত্রিকা
Flying Twitter Bird Widget By blogermohsin.blogspot.com