ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমগুলোতে মিথ্যার ছড়াছড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এবার এসব মিথ্যা শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী। লিখেছেন মিথুন কুমার রায়
ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমগুলোতে মিথ্যার ছড়াছড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। এবার এসব মিথ্যা শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের দাবি, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথমে টুইটারের সংক্ষিপ্ত বার্তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হবে। পরে ফেসবুকেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। তবে এ জন্য আরও দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, কেবল মিথ্যা তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্যে কোনো অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে কি না, তাও ওই যান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধরা পড়বে। এটি ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা বিভাগের কার্যকারিতা বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে। ইউরোপজুড়ে গবেষকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন অনেক আগে থেকেই।
২০১১ সালে লন্ডনে কয়েকটি সহিংসতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে ওই মিথ্যা শনাক্তকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের ধারণাটি আসে। টুইটারের বিভিন্ন বার্তা, ফেসবুকের স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক পেজগুলোতে জনসাধারণের মন্তব্য প্রভৃতি তথ্য-উপাত্ত ওই গবেষকেরা বিশ্লেষণ করেন। তারা বলছেন, অনলাইনে প্রচারিত বিভিন্ন গুজবকে চারটি ভাগ করা হবে। এগুলো হচ্ছে অনুমাননির্ভর তথ্য, মতবিরোধ বা বিতর্কিত তথ্য, অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রচারিত ভুল তথ্য ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচারিত বিকৃত তথ্য।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যালিনা বন্টশেভা বলেন, ২০১১ সালের দাঙ্গা চলাকালে দুর্বৃত্তরা যাতে সংঘবদ্ধ হতে না পারে, সে জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব মাধ্যমে তো প্রয়োজনীয় তথ্যও প্রচারিত হয়। সেগুলো বন্ধ করলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা হলো, এসব মাধ্যমে তথ্য এত দ্রুত ছড়ায় যে মিথ্যাকে চট করে সত্য থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা কোনো ঘটনায় তৎপরতা দেখাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। আর তাদের বিলম্বিত প্রচেষ্টায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নতুন এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন তথ্যের সূত্র যাচাই করা হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্যটি প্রচারের পথ ও ধরন, সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ প্রভৃতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বার্তায় যুক্ত হবে। সেই আলাপচারিতা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তথ্যটির সত্যতা যাচাই করা যাবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় কেবল লিখিত বার্তাই যাচাই করা যাবে, ফেসবুক-টুইটারে প্রচারিত ছবি নয়। প্রাথমিকভাবে সংবাদকর্মী ও চিকিৎসা পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করে পদ্ধতিটির কার্যকারিতা আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নিরূপণ করা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন। বিবিসি ও টেলিগ্রাফ।