হেপাটাইটিস এ এবং বি- এর কথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু হেপাটাইটিস সি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় হেপাটাইটিস সি আসলে নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে হেপাটাইটিস সি। কারণ এই রোগের কোন টিকা এখনো আবিস্কার হয়নি।
এমনকি হেপাটাইটিস সি’র চিকিৎসার জন্য যে ঔষুধ আবিস্কার হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি রোগীর কাজে লাগে না।যেসব রোগী ঐ ঔষুধ সেবনে আগ্রহী, তাদের ঔষুধ কিনতে অনেক কাটখড় পোহাতে হয়। কারণ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে প্রতি সপ্তাহে একবার পিজিলেটেড ইন্টারফেরন নামের একটি ইনজেকশন নিতে হয় টানা এক বছর ধরে।
অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহ ধরে চলে এই চিকিৎসা। সঙ্গে রাইবাভিরিন নামের আরেকটি ঔষুধ। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম প্রায় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের নেই। গরীব মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসার বোঝা বহন করা কখনোই সম্ভব নয়। ১৯৮৯ সালের আগে কেউ হেপাটাইটিস সি’র নামই শোনেনি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস সি-এ আক্রান্ত। এই তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। হেপাটাইটিস সি মরণ রোগ হিসেবেই চিহ্নিত।
সচেতনতার অভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এক শরীর থেকে আরেক শরীরে। অনেকটা এইচআইভি’র মতো। ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ইঞ্জেকশনের সুচ, নিরাপদ নয় এমন যৌন সম্পর্কের কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে নবজাতকেরও এই রোগ হতে পারে। আর মা যদি এর সঙ্গে এইচআইভি ও বহন করে, সেক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ শিশুর হেপাটাইটিস সি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত রোগীর চোখ যে সব সময় হলুদ হবে এমন নয়। মাত্র ১৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে চোখ হলুদ হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে দেখে হেপাটাইটিস সি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। হেপাটাইটিস বি-র তুলনায় এ রোগ অনেক বেশি ক্ষতিকারক। হেপাটাইটিস সি’র জীবাণু দীর্যস্থায়ী হিসাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে থেকে যায়। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে সিরোসিস প্রবল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যারা সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে বছরে ৪ শতাংশের লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।