হাঁটুর ব্যথা মানেই কি বাত? নাকি আর্থ্রাইটিসের সমস্যা? অন্তত ২৮-এর যৌবনে হাঁটুর ব্যথা এমনই চিন্তাদায়ক হয় বইকি। হাঁটু-কোমরের ব্যথা এখন বয়সের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেভাবে সর্বজনীন হয়ে পড়েছে, তাতে এহেন চিন্তা খুব অলৌকিক নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বেশি চিন্তা না করে এক্সারসাইজ করা ভাল। দৌড়সর্বস্ব জীবনে যেভাবে কায়িক পরিশ্রম কমছে, তাতে শরীরের নানা অংশে এমন ব্যথা হামেশাই দেখা দিচ্ছে। প্রথমেই অপারেশনে না গিয়ে বাড়িতেই নানা এক্সারসাইজে, বা সামান্য হাঁটাহাঁটিতে সারতে পারে হাঁটুর ব্যারাম। ডাক্তাররা বললেন, খানিক ফিজিওথেরাপি আর নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম হাঁটুর ব্যথা কমিয়ে, জয়েন্ট মাসলও একেবারে টানটান করবে অল্প সময়ের মধ্যেই।
প্রাত্যহিক দিনের স্ট্রেচিং বা ফি-হ্যাণ্ড হাঁটুর ব্যথায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফাস্ট ফুডের অপকারিতা আর দিনভর কম্পিউটারনির্ভর জীবনে, মাসল অকেজো থাকতে থাকতে ব্যথা করে। হাঁটু ব্যথা মানেই আর্থ্রাইটিসের ভয় সব সময় থাকে না। আর প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে হালকা ফিজিও আর দরকার ব্যায়াম। 'পেন কিলার দিয়ে ব্যথা সারাবার চেষ্টা করবেন না। পেন কিলারে সময় নষ্ট হলে আমাদের কাছে আসেন অনেকে। তখন অপারেশন ছাড়া আর উপায় থাকে না। আর হাঁটুর জয়েন্ট পেন তো আকছার হচ্ছে সব বয়সের লোকের। প্রথমেই বলি, সোজা, সুঠাম হাঁটতে হবে। নিয়মিত কেউ যদি অন্তত আধ ঘন্টা চিন্তাহীন সোজা পা ফেলে হাঁটেন, তাহলেই তিনি লক্ষ্য করবেন যে কোনও জয়েন্ট পেন কীভাবে সেরে যাচ্ছে। আর যাঁদের ইতিমধ্যেই ব্যথা শুরু হয়েছে, তাঁরা আর্থ্রাইটিসের ভয়ে অপারেশনে ঝুঁকবেন না। অধিকাংশেরই আর্থ্রাইটিস হয় না। আমরা কিছু ফিজিও থেরাপি রেকমেন্ড করি। সেশন শেষ হয়ে গেলে সামান্য ব্যায়াম করুন। নির্দিষ্ট ধরনের মাসল এক্সারসাইজ ছোটখাট ব্যথা সারিয়ে দেবে। বরং কয়েকদিন পর ফিল করবেন, পায়ের মাসল-জয়েন্ট শক্তিশালী হয়েছে', জানাচ্ছেন ডাক্তার চিণ্ময় রায়।
তবে এক্ষেত্রেও আরও কিছু সমস্যা থেকে যায়। বাড়িতে আলস্য নিয়ে অনেকেই ব্যায়াম করতে চান না বলে জিমে যান। সঠিন ট্রেনিং না পেলে হাঁটু জখম হবার চান্স বেশি। ড. চিন্ময় রায়ের কথায়, 'জিমে অনেক সময় ভুল চার্ট দেওয়া হয়। মানে ধরুন ট্রেডমিলে হাঁটার সঠিক মাপ আছে, বা সাইকেলেও নির্দিষ্ট সময়ই হাঁটা উচিৎ। অনেকেই আবার না জেনে ভাইব্রেটর নেন। সব কিছু মিলিয়ে হিতে বিপরীত হলে তখন অপারেশন ছাড়া গতি নেই। তাই একদম প্রফেশনাল জিমে যান, যেখানে সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রেনার আছে'।
যাঁরা জিমে যেতে চান না তাঁদের জন্য বাড়িতেই হাঁটু সারানোর নানা ব্যায়াম মজুত- তা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাই। প্রথমেই আসে চেয়ার স্ট্রেচিং। চেয়ারে বসে সামনে পা টানটান করে মেলে দিন। একটু মাটি থেকে তুলে ৫-১০ সেকেন্ড রাখুন। দিনে ৪-৫ বার করুন। হিল সাইড নি-এক্সটেনশনও খুব উপকারি। উপুড় হয়ে শুয়ে একদিকের পা একবার ভাঁজ করুন। অন্য পায়ের গোড়ালি সামান্য একদিকে কাত করুন। ১০ সেকেন্ড রেখে আবার উল্টো পায়ে করতে হবে। হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচিং মূলত কমবয়েসীদের জন্য। সোজা দাঁড়ান। এক পা তুলুন। পায়ের পাতা সোজা থাকবে। এই অবস্থায় পিঠের দিকে তাকাতে চেষ্টা করুন। ব্যালেন্স রাখতে দেওয়ালের সাহায্য নিতে পারেন। এটাও ১০ সেকেন্ড করে ৩ সেট করবেন।
একটু কঠিন এক্সারসাইজের উপকারিতাও বাড়িতেই নেওয়া যায়। ওয়াল সাইড যেমন। দেওয়ালে পিঠ রেখে হাঁটু ৩০ ডিগ্রি ভাঁজ করে রাখুন ১ মিনিট। এভাবে ৩ সেট। বেন্ট লেগ রেজ করতে পারেন। চেয়ারে সোজা বসে, হাঁটু না ভেঙে যতটা পারেন ওপরে তুলুন। ১ মিনিট রাখবেন প্রথম দিকে। তারপর যত বাড়ানো যায়। স্ট্রেট লেগ রেজে দুটো চেয়ার লাগবে। একটায় বসে অন্যটায় পা তুলে দিন। অন্য পায়ের পাতা সোজা রেখে সেই পাটা আকাশের দিকে তুলুন। ১ মিনিট রাখার চেষ্টা করুন। অন্তত ৩ বার করবেন দু-পা বদলে। স্টেপ আপে চর্বিও ঝরবে। উঁচু সিঁড়ি বা চেয়ারে হাত রেখে হাফ বেন্ট হতে হবে। লাফিয়ে পা সামনে-পিছনে আনতে হবে। ১০ বার করে শুরু করুন। পরে ৩০ বার করবেন।
এছাড়া আছে জিম বাইক। হাঁটু অন্তত ১৫ ডিগ্রি মুড়ে এক্সারসাইজ করবেন। প্রথমে পাওয়ার থাকবে একেবার হালকা। পরে স্ট্রেংথ অনুযায়ী বাড়াবেন। বাড়াবাড়ি হবার আগে পেন কিলারে কাজ না সেরে এক্সারসাইজ যদি অপারেশনের খরচা বাঁচায় তাতে ক্ষতি কি? সোজা হাঁটা দিয়েই না-হয় শুরু হোক হাঁটুর ব্যারাম সারানো।