সবাই আপনাকে পছন্দ করুক এটা নিশ্চই আপনি চান। এ জন্য বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না। এখানে বিশেষজ্ঞরা ৬টি উপায় আপনাকে বলে দিচ্ছেন যার মাধ্যমে আপনি সহজেই সবার মাঝে পছন্দের ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবেন। এগুলো রীতিমতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
১. মানুষকে নিজের সম্পর্কে বলতে উৎসাহ দিন
মানুষ ভালো খাবার খেতে এবং অর্থপ্রাপ্তিতে যেমন মজা পায়, তেমনি মজা পায় নিজের সম্পর্কে বলতে। বন্ধুদের আড্ডায় হোক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মানুষ নিজের সম্পর্কে বলতে পছন্দ করেন।
হার্ভার্ডের ডায়ানা তামির তার সহকর্মী জেসন মিচেলকে নিয়ে এক গবেষণা পরিচালনা করেছেন। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে তারা দেখিয়েছেন, নিজের সম্পর্কে তথ্য উজাড় করে দিতে মানুষ দারুণ পছন্দ করে।
২. ভুল বোঝানোর জন্য প্রশ্ন করুন
মানুষের চিন্তাধারার ভুল ধরিয়ে দিতে আপনি যদি প্রশ্নের মাধ্যমে এগিয়ে যান, তবে তারা জবাব দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং তা সমাধানে উদ্যোগী হবেন। এই পদ্ধতিতে মানুষ তাদের ভুল নিয়ে হুমকির সম্মুখীন হয় না এবং সমাধানের পথ খুঁজতে উদ্যোগী হয়। এই পদ্ধতিতে মানুষকে তার ভুল সরাসরি ধরিয়ে দেওয়া হয় না। বরং তারা নিজের চিন্তার ভুল অংশটি সম্পর্কে জ্ঞাত হয়। নিজেরাই নিজের ভুল ধরতে পারলে আপনার সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে না।
৩. উপদেশ চান
মানুষকে আপনার প্রতি উষ্ণ মনোভাবসম্পন্ন করতে এবং নিজেকে তাদের মাঝে গ্রহণযোগ্য করার অন্যতম শক্তিশালী পন্থা তাদের উপদেশ চাওয়া। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বলে মত দিয়েছেন স্ট্যানফোর্ডের প্রফেসর জেফরি পিফার, রবার্ট সালদিনি এবং অনেকে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের কর্তৃত্বের সংকটে অন্যের কাছ থেকে উপদেশ চাওয়া হলে তার কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় এবং আপনার প্রভাব দ্রুত বেড়ে যায়। ক্যাটি লিলজেনকুয়েস্ট এ গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন, উপদেশ চাওয়ার অর্থ হলো অন্যকে সহযোগিতামূলক আচরণ, তথ্যের আদান-প্রদান এবং কার্যকরভাবে একমতে পৌঁছতে দারুণ প্রভাব বিস্তার করে।
৪. দুটি প্রশ্ন পদ্ধতি
মানুষকে তাদের জীবনের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রশ্ন করুন। জবাব পাওয়ার পর আপনি তাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে মনোভাব জানতে চাইতে পারেন। খুব সহজ এবং অকার্যকর বলে মনে হলেও এই পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন নোবেলজয়ী মনোবিজ্ঞানী ডেনিয়েল ক্যানিম্যান। প্রথম প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব পেলে আপনার পরের প্রশ্নেও তারা জীবটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেন।
৫. শেষ তিনটি শব্দের পুনরাবৃত্তি করুন
আপনি যে কতোটা আদর্শ শ্রোতা তার বোঝানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এটি। আচরণগত সামাজিক দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করছেন লিল লোন্ডেস। তার মতে, মানুষ সব সময় ভালো শ্রোতাকে পছন্দ করেন। বক্তা যা বলছেন, তার বাক্যের শেষ দুটি বা তিনটি শব্দ যদি আপনি বলেন তবে বক্তা মনোযোগী শ্রোতা হিসেবে আপনার প্রতি ইতিবাচক হয়ে উঠবেন। যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতিতেও সহানুভূতি ও হালকা প্রশ্নের ভাব কণ্ঠের ঢেলে বক্তার শেষ তিনটি শব্দ নিজে বলুন, দেখবেন পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এমনকি সমঝোতামূলক আলোচনার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর।
৬. পরচর্চা তবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে
একজনের কাছে অন্যের সম্পর্কে আপনি কীভাবে বলছেন তার ওপর ভিত্তি করে আপনার প্রতি শ্রোতার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে। অন্যের সম্পর্কে অভিযোগ বা নেতিবাচক তথ্যগুলো যদি আপনি ইতিবাচক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন, তবে আপনি সেখানে ভালো মন-মানসিকতার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
গবেষকরা বলেন, যখন আপনি কারো সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে থাকেন, তখন এক পর্যায়ে শ্রোতা আপনাকেও তার মতো করেই দেখতে শুরু করেন যাকে নিয়ে আপনি বলছেন। তাই পরচর্চার কাজটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে করুন। তাহলে, আপনার প্রতি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি ভালো থাকবে।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার