ল্যান্ডফোনের কল না ধরলে গ্রাহকের মোবাইলেও রিং হবে এর সঙ্গে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের আদলে থাকছে মোবাইল চ্যাট। এছাড়াও রিভ তৈরি করেছে নিজের সুইচ ও বিলিং প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি।
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ল্যান্ডফোন অপারেটর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এবার মোবাইল ফোনের মতো সেবা দেবে।জানা গেছে, মোবাইল ফোন থেকেও টিঅ্যান্ডটি ফোনের কল ইনকামিং ও আউটগোয়িং হবে।
নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো গ্রাহক ল্যান্ডফোনে কল করলে প্রথমে ওই কলটি সংশ্লিষ্ট ল্যান্ডফোনে বাজবে। ফোন কলটি কেউ না ধরলে নির্দিষ্ট কয়েকবার রিং হয়ে সেটি সংশ্লিষ্ট ল্যান্ডফোন মালিকের মোবাইল ফোনেও বাজতে থাকবে। দেশ-বিদেশের যেকোনো জায়গা থেকেই এ ফোন করা এবং রিসিভ করা যাবে। তবে এ জন্য মোবাইল ফোনটিতে থ্রিজি কিংবা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থাকতে হবে। এতে ল্যান্ডফোনের রেটেরও কোনো তারতম্য হবে না।নতুন এই অ্যাপসটির (সফটওয়ার) উদ্ভাবক বাংলাদেশেরই একটি সফটওয়্যার কম্পানি রিভ সিস্টেমস। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম রেজাউল হাসান জানান, এই প্রযুক্তির ফলে বদলে যাবে বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি লিমিটেড) সেবার পরিধি ও মান। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প খরচে বিশ্বের যেকোনো ল্যান্ডলাইন অপারেটর তাদের সংস্থার চেহারা বদলে দিতে পারবে। রেজাউল হাসান বলেন, সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোনাতে অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে তাদের এই নতুন প্রযুক্তিটি বিশ্বের ল্যান্ডলাইন অপারেটরদের মধ্যে দারুণ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিটিসিএলকেও তাঁরা এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারের জন্য একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। বিটিসিএলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিটি কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা রেগুলেটরি কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তাঁর মতে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাপটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ল্যান্ডফোন অপারেটর বিটিসিএল। বর্তমানে আবাসিক সংযোগ বলতে গেলে বন্ধ রয়েছে। সর্বমোট ১২ লাখ সংযোগের মধ্যে এখন ছয় কি সাত লাখ সংযোগ সচল আছে। বাকি সংযোগগুলোর কোনো কোনোটি বিচ্ছিন্ন কিংবা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্যাবল (তার) চুরির কারণে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।তাঁর মতে, বিটিসিএলে নতুন এই প্রযুক্তি চালু হলে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা সংস্থাটি। লোকসানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসবে লাভের ধারায়। তার মতে, এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যান্ডফোন মালিকের মোবাইল ফোনে একটি সফটওয়্যার সংযোগ করতে হবে। এই সংযোগটি পাওয়ার জন্য তাঁকে বিটিসিএলের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। করতে হবে রেজিস্ট্রেশনও। এতে একজনের ল্যান্ডফোনের কল অন্য কেউ ইচ্ছা করলেও নিতে পারবে না। এতে সব ধরনের প্রাইভেসি বজায় থাকবে। টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এটি একটি চমৎকার উদ্ভাবন। সত্যিকার অর্থে এই প্রযুক্তি বদলে দিতে পারবে বিটিসিএলকে।একই সঙ্গে সফটওয়্যারটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেও দেশ বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। তিনি বলেন, একাধিক মোবাইল সংযোগ থাকার পরও মানুষ এখনও বিটিসিএল (টিএন্ডটি) সংযোগ নেওয়ার জন্য অনেক বেশি আগ্রহী। এ কারণে বিটিসিএলকে নতুন সাজে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তার মতে, নতুন নতুন সফটওয়্যার সংযোগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ল্যান্ডফোনটিকে মোবাইল ফোনের মতো আধুনিক ও জনপ্রিয় করে তোলার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এ বছর মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে অংশ নিয়ে বিশ্বের টেলিযোগাযোগ সেক্টরের নৃত্য নতুন অসংখ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছেন। এখন সময় এসেছে এসব প্রযুক্তি সুবিধা দেশের মানুষকে উপহার দেওয়ার।টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে সাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ল্যান্ডফোনের ব্যবসা সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। রিভের এই সলিউশনের মাধ্যমে ল্যান্ডলাইন অপারেটরদের নতুনভাবে মার্কেট শেয়ার অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে বলে তারা মনে করছেন। এই সলিউশনটি মূলত একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করবে। অ্যাপটি থ্রিজি কিংবা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে থাকলেই ল্যান্ডফোনের যে কোনো কল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কোনো জায়গা থেকে রিসিভ করা এবং ইচ্ছেমতো কলও করা যাবে। এতে ল্যান্ডলাইনের কলরেটে কোনো তারতম্য ঘটবে না।রিভ সিস্টেমসের ইউরোপ সেলস ডিরেক্টর রন পাস এ প্রসঙ্গে জানান, ইউরোপে মোবাইলে থ্রিজি ইন্টারনেটের ব্যবহার খুবই আশাব্যঞ্জক। আর তাই তিনি মনে করছেন এটি ল্যান্ডলাইন অপারেটরদের জন্য অনেক বড় একটি সুযোগ। শুধু ইউরোপ নয়, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেও তাদের এই সলিউশনটি ল্যান্ডলাইন অপারেটরদের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।এছাড়াও এবার এমভিএনও মোবাইল অপারেটরদের জন্যও রিভের রয়েছে এমভিএনও প্রোডাক্ট স্যুট। যার মাধ্যমে এমভিএনও অপারেটররা নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ে রিভ সিস্টেমের মোবাইল ডায়ালার ব্যবহার করতে পারবে। এই মোবাইল ডায়ালারের সঙ্গেই থাকছে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এবং আইপি কল করার সুবিধা। তাই যেসব এমভিএনও ডাটা সিম অফার করছে তারা এখন রিভের সেবা ব্যবহার করে খুব কম রেটে লং ডিস্টেন্স কলের অফারও দিতে পারবে। এর সঙ্গে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের আদলে থাকছে মোবাইল চ্যাট। এছাড়াও রিভ তৈরি করেছে নিজের সুইচ ও বিলিং প্ল্যাটফর্ম।রিভ সিস্টেমসের গ্লোবাল মার্কেটিং ডিরেক্টর সঞ্জিত চ্যাটার্জি বলেন, নিজ মার্কেট থেকে বের হয়ে এমভিএনওরা অনেক ডায়নামিক সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আর তাদের সলিউশন ব্যবহার করে তারা তাদের সেবার পরিধি অনেক বেশি ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী যেকোনো এমভিএনও তাদের এই সেবা নিয়ে তাদের গ্রাহকদের ভয়েস কল, চ্যাট, ফাইল ট্রান্সফার, মোবাইল টপ আপ এবং এসএমএস সুবিধা প্রদান করতে পারবে। বিটিসিলের একজন পরিচালক জানান, রিভ সিস্টেমসের প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুরে এবং প্রধান ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বাংলাদেশে অবস্থিত।ভারতেও রয়েছে তাঁদের ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে রয়েছে তাঁদের সেলস অফিস। তিনি বলেন, নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে রিভের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর মতে, এটি বাস্তবায়িত হলে আগামী এক বছরের মধ্যে টিঅ্যান্ডটি গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। রিভ সিস্টেম সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তারা ৭৫টিরও বেশি দেশে দুই হাজার দুই শতাধিক সার্ভিস প্রোভাইডারকে সফলতার সঙ্গে সেবা দিয়ে আসছেন।