শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৪

সবার ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে গেলে থাকতে হবে ইচ্ছাশক্তি

কথার জোরে নিজেকে জাহির করা আর ভেতরের সৌন্দর্য দিয়ে অন্যের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া দুটি পৃথক ব্যাপারআসুন, ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে সরে এসে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অতিরিক্ত সময়গুলোকে স্তরে স্তরে ভাগ করি

মতামত দেওয়ার সময় পরিস্থিতি মেনে সেটাই বলি, যা মানুষ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করেইয়ার্কির ছলে সুক্ষ্মভাবে অন্যকে শ্লেষ করলে প্রকারান্তরে তাকে আঘাত দেওয়াই হয়
অন্যদিকে কেউ যদি আপনকে নিয়ে মজা করে তাহলেও ঠোঁটের কোণের হাসিটা ধরে রাখা উচিত্‍ একে গভীরভাবে না নিয়ে গা থেকে ঝেড়ে ফেলাই উত্তম

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আনাচে-কানাচে নেতিবাচক নানা প্রভাব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেমাঝেমধ্যে এই ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, আমাদের চারপাশের জগৎ কেন এত অসংযত, কেন এত সংকীর্ণ! আমাদের কর্মক্ষেত্রে জুনিয়রদের নিয়ে নির্ধারিত মিটিংয়ের সময় এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয় যাতে আমাদের অবস্থান নাজুক হয়ে যায়আবার বসের প্রশংসা করতে গিয়ে অতিরিক্ত কথা না বলে ফেলাই শ্রেয়সংক্ষেপে বলতে গেলে 'কোনো কিছু বলতে গিয়ে অতিউৎসাহী না হওয়াই ভালো'


অনেক সময় অপ্রিয় সত্যেরও অবতারণা করা ঠিক নয়, কেননা অনেকেই এটা হজম করতে পারে না, সেটা যত দৃঢ় সত্যই হোক না কেনকেউ যদি আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত দেয় আর আমরা এর কড়া  প্রতিক্রিয়া দেখাই- তবে এর ফলে কী হতে পারে? আনন্দঘন মুহূর্তটি নিমেষে বিষাদময় হয়ে যেতে পারে
সেই সময়ও মাথা ঠাণ্ডা রেখে হাসি মুখ করে তাকে ধন্যবাদ জানানোই ভালোযতক্ষণ আমাদের মনোভাব ইতিবাচক থাকবে ততক্ষণ সামান্য মিথ্যেও মিথ্যা হিসেবে বিবেচিত হবে না

কিভাবে একজন মানুষ ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে? এ ব্যাপারে মনোচিকিৎসক ও 'লাইফস্টাইল' পরামর্শক ডা. এসকে শর্মা ১০টি পরামর্শ দিয়েছেন

১. থাকতে হবে ইচ্ছাশক্তি: সবার ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে গেলে থাকতে হবে ইচ্ছাশক্তিএই ইচ্ছাশক্তি আপনার জীবনযাত্রার মানে উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে'ইতিবাচকতা' এটা একটা আবরণের মতোযখন আপনি মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবেন, মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করবেতখনই আপনি হয়ে উঠবেন ইতিবাচক মানুষআপনি যখন দ্রুত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে ফেলতে পারবেন তখন আপনাকে আপনার চারপাশের মানুষ ভদ্রতা দেখাবে, সহকর্মীরা আপনাকে উৎসাহ দেবে

২. বাস্তবমুখী হতে হবে: একেবারে সাধু ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা না করাই ভালআপনি ইতিবাচক ব্যক্তি হয়ে উঠবেন, তার মানে এই নয় যে আপনার কোনো নেতিবাচক আবেগ থাকতে পারে না কিংবা কখনোই নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার আপনি হবেন নাসর্বোপরি পরিস্থিতি অনুযায়ী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে হবেকোনো কাজে ব্যর্থ হলে হতাশাগ্রস্ত হবেন না কিংবা বিপথের দিকে ধাবিত হবেন নামানসিকভাবে আপনি একটি গাণিতিক ছক কষে রাখুন, যাতে করে সামনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারেন

৩. অভিজ্ঞতা অর্জন করুন: একজন মনোযোগী পর্যবেক্ষক হোনআপনার চারপাশে খেয়াল রাখুনকিভাবে আপনি আরো বেশি ইতিবাচক উপাদান আয়ত্ত করতে পারবেন তার জন্য দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডে মনোযোগী হোনএটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো বেশি ইতিবাচক করে তুলবেসময় বাঁচিয়ে আপনাকে কাজ করে যেতে হবেপরিচিত 'চেহারা'র যে মূল্য আছে এ ব্যাপারটাকেও কাজে লাগানো শিখতে হবেআপনার ভেতরে এই ক্ষমতাও তৈরি করতে হবে যেন আপনার আশেপাশের মানুষ আপনার কর্মকাণ্ডে প্রভাবিত হয়

৪. পরিশীলিত করুন বক্তব্য ও শরীরের ভাষা: ভাষায় মার্জিত ও ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হবেসহকর্মীদের সাথে মিশতে হবে কাছাকাছি থেকে এবং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শারীরিক উপস্থাপনা সবসময় পরিশীলিত থাকবেআপনার আশেপাশে আনন্দময় কিছু ঘটলে চেহারায় আনন্দ ও সুখী সুখী ভাব নিয়ে আসুনহাসির কিছু ঘটলে মুখে হাসি নিয়ে আসুনকাছের মানুষদের মধ্যে কেউ নতুন কিছু অর্জন করলে তাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলবেন নাতাদের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলার সুযোগ তৈরি করে দিনএটা ভাববেন না যে আপনি একাই বুদ্ধিমান, আপনার চারপাশেও বুদ্ধিমানেরা আছেকৌশলে চলুন

৫. বন্ধুদের সময় দেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ রাখুন: একটিমাত্র পথেই যদি আপনি সবার আস্থাভাজন হয়ে উঠতে চান সে ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ঘটনাই ঘটতে পারেআপনি যদি বন্ধুমহলে বেশির ভাগ সময়ই রূঢ় আচরণ করেন তাহলে মনে রাখবেন আপনাকে একই ধরনের আচরণের মুখোমুখি হতে হবেআপনার হৃদয়ে ইতিবাচকতা যদি গভীরভাবে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুমহল হবে ইতিবাচক, কর্ম উদ্যোগী, হাসিখুশি ও প্রাঞ্জলআপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই নিজেকে ইতিবাচকভাবেই খুঁজে পাবেন

৬. আলস্য দেখাবেন না: আলস বা আয়েসি হয়ে বসে থাকবেন নাঅন্যদের সাথে থাকুন আর একা থাকুন, ইতিবাচক কাজের মধ্যে থাকবেনজোক বলুন, মজার ঘটনা শেয়ার করুন, খেলাধুলায় অংশ নিনকাজ শেষে হাঁটতে বের হনযৌনতা উপভোগ করুনএকটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন

৭. সবকিছু সহজেভাবে গ্রহণ করুন: প্রাত্যহিক জীবন থেকে আপনি আঘাত পেতে পারেনএটা মেনে নিতে আপনাকে তৈরি থাকতে হবেউদাহরণ স্বরূপ, আপনাকে প্রতিদিন ভীড়ের মধ্যে গাড়ি চালাতে অথবা পার্কিং করতে হতে পারেযখন আপনি এই ব্যাপারগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন আর কোনো সমস্যাই হবে নানিজেকে এবং আপানার চারপাশের দুনিয়াকে খুব হালকাই মনে হবে

৮. যোগ ব্যায়াম শিখে নিন: যোগ ব্যায়ামের শিক্ষক ও পুষ্টিবিদ অভিলাষ কেইল বলেন, 'প্রতিদিন প্রার্থনা করুন, এটা আপনার ভেতরকে প্রকাশ করতে সহায়তা করবে, আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শেখাবে' এটা যে শুধু নিরবেই সুখ বিচ্ছুরিত করবে তা নয়, খুব অল্প সময়েই আপনার ইন্দ্রিয়কে সচেতন করে তুলবেযোগব্যায়মের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ফলে আপনার মনকেও বিস্ময়করভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেনসব সময় যোগ ব্যায়াম করুন, কেননা আপনি অনুভব করতে পারবেন আপনার শিরা-উপশিরায় ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হচ্ছে, যা আপনার স্নায়ুকে স্থিতিশীল রেখে আপনার মানসিক অবস্থাকে উন্নত করবেএটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এর ফলে আপনার সহনশীলতা বহুগুন বৃদ্ধি পাবে

৯. ডায়েরি লিখুন: একটা সময় নির্ধারণ করে দিনের সমস্ত কাজগুলোকে মনে করুন, এখান থেকে ভাল কাজগুলো আলাদা করে ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করুনএটা খুব সামান্য ব্যাপারও হতে পারে- যেমন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার বাসে আরোহন করা, আপনার মায়ের হাতের তৈরি সুস্বাদু নাস্তা, সময়মতো বকেয়া বিল পরিশোধ করা ইত্যাদিএতে চোখের সামনে নিজের করা ছোট একটি ইতিবাচক কাজ দেখতে পারবেনতখন নিজের জীবনটাকে অর্থবহ মনে হবেসেখানে কোনো নেতিবাচক অবস্থান থাকবে নাএই পরামর্শ খুব ভালোভাবে ১০ দিন আত্মস্থ করুন১০ দিন পর যখন আপনি আপনার লেখা ডায়েরিটি পড়বেন তখন আপনি নিজেই নিজেকেই দৃঢ়ভাবে সুখী ঘোষণা করবেন

১০. বলুন ‘থ্যাঙ্ক ইউ’: সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দিনবাবা-মাকে ধন্যবাদ দিনবন্ধুদের ধন্যবাদ দিনআপনি যে পরিশ্রম করছেন সে জন্য নিজেকেও ধন্যবাদ দিনবারবার থ্যাঙ্ক ইউ বললে আপনি হয়ে উঠবেন বিনয়ী, বিনয়ী হলে আর নিরাশ হবেন না। তথ্যসূত্রঃ ওয়েবসাইট 


Flying Twitter Bird Widget By blogermohsin.blogspot.com