শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০১৪

কেন খাবেন পিল ???

আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই আশা করি ভাল আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভাল আছি
সাধারণ মানুষের মধ্যে পিল নিয়ে রয়েছে নানা ভীতি। চিকিৎসা করতে গিয়ে বার বার সেটা দেখেছি। তাই পিলকে অনেকেই সহজে মেনে নেন না।

পিল নিয়ে এই ভীতি একেবারেই নিছক নয়। এর সূত্রপাত সত্তরের দশকের প্রথম দিকে। যখন বাজারে প্রথম পিল এল। আমেরিকায় সে সময় শোনা গিয়েছিল মেয়েদের জন্য এসে গিয়েছে ম্যাজিক ওষুধ, ইস্ট্রোজেন। যা কি না আজীবন যৌবন ধরে রাখবে। মূলত মেনোপজের পরেও যৌবন ধরে রাখার জন্যই কন্ট্রাসেপটিপ পিলের ব্যবহার শুরু হল। তখনকার পিলে থাকত শুধু ইস্ট্রোজেন। শুরু হল মুঠো মুঠো ইস্ট্রোজেন খাওয়া। আর তার বছর দশেকের মধ্যেই হাতে নাতে ফল। ক্লিনিকগুলো ভরে যেতে লাগল ক্যানসারের রোগিতে। তাই পিলের নাম শুনলে অনেকেই ভয় পান।
 

ক্যানসার কেন
শুরুতে কড়া ডোজে ইস্ট্রোজেন দেওয়া হত। প্রোজেস্টেরন দেওয়া হত না। ইস্ট্রোজেন জরায়ুর দেওয়ালকে মোটা করে, আর প্রোজেস্টেরন সেই মোটা দেওয়াল খসিয়ে দেয়। শুধু ইস্ট্রোজেন দেওয়া হত বলে জরায়ুর দেওয়াল শুধু মোটাই হতে থাকল। এই ভাবে পুরু হতে হতে এক সময় জরায়ুর ক্যানসার হয়ে যেত। সেই থেকে রটে গেল যে কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেলেই ক্যানসার হয়। এই ভাবেই পিল নিয়ে বেশ কিছু মিথ ও ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে পিল কতখানি নিরাপদ সেই ব্যাপারে।

তবুও পিল
কারণ পিল খুব কার্যকরী। কন্ট্রাসেপশনের যত পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে পিল সবথেকে বেশি কাজ করে। সহবাসের ওপর পিলের কোনও প্রভাব নেই। পিল খেলে সহবাসে কোনও সমস্যা হয় না। এটা প্রায় ১০০ শতাংশ রিভার্সেবল। অর্থাৎ সন্তান চাইলে পিল বন্ধ করে দিলেই হবে।

পিলের উপকারিতাও অনেক
পিরিয়ডের সময়কার অতিরিক্ত ব্লিডিং বা ব্যাথা কমিয়ে দিতে পিল সিদ্ধহস্ত। এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলায় ডাক্তাররা পিল প্রেসক্রাইব করে থাকেন। তা ছাড়া পিলের কিছু দীর্ঘ মেয়াদি উপকারও আছে। যেমন পিল ওভারি, ইউটেরাস, কোলন, আর রেক্টামের ক্যানসারকে দূরে রাখে।
 
আধুনিক লো-ডোজ পিল অনেক বেশি নিরাপদ
একেবারে প্রথম দিকে যে সব পিল ব্যবহার করা হত, তাতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা থাকত অনেক বেশি। সে সময় এখনকার থেকে ৭ গুণ বেশি ইস্ট্রোজেন থাকত ও ২০ গুণ বেশি প্রোজেস্টেরন থাকত। তাই সে সময় একটা পিল থেকে যে পরিমাণ ইস্ট্রোজেন এক দিনে শরীরে ঢুকত, তা এখনকার পিলে সাত দিনে শরীরে ঢোকে। আর সে সময় একটা পিল থেকে যে পরিমাণ প্রোজেস্টেরন এক দিনে শরীরে ঢুকত, তা এখনকার পিলে দিনে শরীরে ঢুকতে ২০ দিন সময় নেয়। হরমোনের পরিমাণ কম থাকায় এখনকার পিল অনেক বেশি নিরাপদ।
 
পিল থেকে মারাত্মক ধরনের সাইড এফেক্ট খুব কম ক্ষেত্রে দেখা যায়
কিছু ক্ষেত্রে পিল থেকে স্ট্রোক বা হার্ট-অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু তা খুবই কম ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। পিলের কারণে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বললে বলতে হবে, পিল খান না, এ রকম মহিলারও স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবে পিল নিয়ে একটা কথা বলতেই হবে। আগে থেকে কিছু রিক্স ফ্যাক্টর থাকলে পিল খেলে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিছু কিছু রিক্স ফ্যাক্টর আছে, যেগুলি থাকলে পিল খেলে বিপদ অনেক বেড়ে যায়। যেমন যাঁরা ধূমপান করেন পিল খেলে তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু যিনি ধূমপান করেন না তাঁর ক্ষেত্রে পিল খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা যিনি পিল খান না, তাঁর থেকেও কম হতে পারে।
ঘটনা হল পিলের ভাল-মন্দ সব কিছু নির্ভর করে কাকে কী মাত্রায় কত দিন ধরে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। জীবনে সব কিছুতেই ঝুঁকি আছে। প্রেগন্যান্সিতে ঝুঁকি আছে। পিলেও ঝুঁকি আছে। কিন্তু নিজে না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বুঝেশুনে পিল খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, ব্যাপারটা যদি কন্ট্রাসেপশন হয়, তবে কিছু না করাটা আরও বেশি ঝুঁকির।
Flying Twitter Bird Widget By blogermohsin.blogspot.com