আসসালামু
আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই আশা করি ভাল আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভাল আছি।
আপনি কি ঠিক মতো শ্বাস নেন? চমকে উঠে নাকের তলায় হাত দিয়ে ফেললেই কাজ শেষ
নয়। জানেন কি, শ্বাস-প্রশ্বাসের বেগড়বাঁই আপনার নিত্যদিনের মনখারাপ আর
শরীরে নানা রকম অস্বস্তির কারণ? শ্বাসে যত্ন আর সামান্য নিয়ন্ত্রণেই
জিম-মেশিনের পাট চুকিয়ে সুন্দর মন আর সরু কোমরের সেই বহুকাঙ্খিত চাহিদা
মিটবে সহজেই। বিশেষজ্ঞদের মতে এক নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া আর অন্য নাক দিয়ে
নিশ্বাস ফেলার শারীরিক নিয়মটাই যদি বেশ টেকনিক্যালি বশে আনা যায়, তবে
আধুনিক জীবনের নানা উটকো রোগের হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে। বিশ্বের প্রথম
সারির দেশগুলিতে ডায়াবেটিস, গ্লুকোমা, ওবেসিটির মতো রোগ প্রতিরোধেও গড়ে
তুলছে সঠিক ভাবে শ্বাস নেওয়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অথচ ব্যাপারটা এমন কিছু
শক্ত নয়। কাজের ফাঁকেই সামান্য সচেতনতা রাখলেই আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের
বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে।
'এখন অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদেরও হঠাৎ করে চেস্ট পেন, অ্যাংক্সাইটি, স্কিন
প্রবলেম, কন্সটিপেশন, ইনসমনিয়া, অ্যাসিডিটির মতো রোগের প্রকোপে পড়তে দেখা
যায়। অথচ এগুলো রোধ করা নিজের পক্ষেই সম্ভব। প্রথম কারণ আমরা নিশ্বাসের
সঙ্গে বেশ খানিকটা দূষিত গ্যাস ভিতরে নিই। প্যাসিভ স্মোকিংও আছে। লাংস এবং
শরীরের অন্যান্য অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাতে। কিন্তু সেটুকু প্রতিরোধ
শ্বাস নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট। এক নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া আর অন্য নাক দিয়ে ছাড়ার
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে চললেই হবে। আসলে দূষণের ফলে আমাদের সাইনাস সেল অনেক
সময় পরিষ্কার হয় না। ফলে শরীর নিজের মতো করে ফাঁকফোঁকর খুঁজে নেয় শ্বাসের।
কিন্তু সেটা তো কাম্য নয়'।
'প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আর শুতে যাবার আগে, নাকে একটু সর্ষের তেল বা জল
টেনে সাইনাল সেল পরিষ্কার রাখুন। এবার এক নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া আর অন্য নাক
দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ার প্রসেস কন্টিনিউ করুন অন্তত ২০ বার করে ২ বারের সেট।
এছাড়াও সারাদিনে কাজের ফাঁকে একবার করে করুন। দেখবেন, ভিতরের টিউব পরিষ্কার
থাকলে দিনের শেষে মাথা ব্যথা হচ্ছে না। রাতের ঘুম এবং ক্ষিদে দুটোই ভাল
থাকবে। শ্বাস নিয়ন্ত্রণ থাকলে আপনার শরীর থাকবে মজবুত। অযথা মেদ জমে কোমর
ভারি হবার টেনশন একেবারেই ছেড়ে দিন। প্রাচীন যুগের মানুষের সুস্থ-দীর্ঘায়ু
শরীরের একমাত্র কারণ শ্বাসে নিয়ন্ত্রণ। অথচ আমরা ব্যস্ত সময়ের চাপে এই
প্রাণদায়ী বিষয়টিকেই এড়িয়ে চলি-' জানাচ্ছেন চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অভিষেক
শর্মা।
কলকাতায় সে রকম স্কুল না থাকলেও চেন্নাইতে ইন্ডিয়ান স্কুল অফ ব্রিদিং
এই ধরনের কাজ করে চলেছে। দক্ষিণের বেশ কিছু ফোক পারফরম্যান্সের অন্যতম
শক্তি আসে শ্বাস থেকেই। সেখান থেকেই অনুভূত হয়েছিল শ্বাসের নিয়ন্ত্রণে
নিজের শরীর ও মন সুস্থ করার কথা। এখানকার প্রধান সুকন্যা জানাচ্ছেন,
'স্ট্রেস, ব্লাড প্রেশার, ওজন এমনকি ডায়াবেটিসের মতো অসুখের উপশমে শ্বাসের
সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং টেকনিক মেনে চলে প্রয়োজন। আমাদের এখানে আমরা সেই
ট্রেনিং দিই। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আমাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দেশের অন্য অংশেও আমাদের শাখা খুলব, যাতে মানুষ ভরা শ্বাস নিয়ে বাঁচতে
পারে', জানালেন তিনি।
বিদেশে অবশ্য শ্বাসের এমন পদ্ধতি শেখার স্কুল অনেকদিন ধরেই চালু আছে।
হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী কেট হাডসন একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন,
'সারাদিনের শ্যুটিং, মেশিনারির মধ্যে শরীরের প্রতি যত্ন সত্যিই খুব কম নয়।
আমার ট্রেনার আমাকে ইন্ডিয়ান যোগার কথা বলেছিলেন। সেখান থেকেই আমি ব্রিদিং
এক্সারসাইজ শিখি। টেকনিক মেনে ইনহেল আর এক্সহেল শুরু করার পর থেকে আমি ফিল
করি কতটা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট হয়। স্কিনে এফেক্ট পড়ে। আমার সত্যি মনে হল,
আমরা সামান্য সচেতন হলেই কিভাবে সুস্থ শরীর পেতে পারি'।
তা, আপনি কীভাবে শুরু করবেন? একদম গোড়ার নিয়ম মেনে এক নাক দিয়ে শ্বাস
নিয়ে অন্য নাক দিয়ে ছাড়ুন। একই ভাবে বিপরীত নাকের ব্যবহার করুন। প্রতি
শ্বাস ছাড়ার পর 'ওম' উচ্চারণ করতে পারেন। দুটো সেট এভাবে চলার পর, খানিক
পেটে মন দিন। পেটে চাপ দিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ূন জোরে। ২০ বার চলুন এই
নিয়মে। তারপর দেখুন তো, ফাস্ট ফুডের ফাস্ট জীবনে প্রাণভরে বাঁচা যায় কি না!